ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধীকার
মুফতি:জাকারিয়া ফারুকী: ইসলামের পূর্বে নারীদের কোন অধিকার ছিলোনা,মর্যাদা ছিলোনা,তাদের প্রতি পুরুষের কোন ভালোবাসা ছিলোনা,ইসলামের পূর্বে নারীদের শুধু ভোগের জন্য ব্যবহার করা হত।সেই অন্ধকার যুগে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরআনের আলোতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে নারীদের মর্যাদা ও সম্মান দ্বান করেন।সুবহানাল্লাহ!
রাসুল (সাঃ) নারীদের অধিকার বাস্তবায়ন করেন।
এমনকি তিনি তার পত্নী-স্ত্রীদের সাথে কেমন ব্যবহার করতেন,কেমন সম্প্রীতি রাখতে তার কিছু নমুনা উল্লেখ করা হলো।
১/স্ত্রী গ্লাসের যে স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করে সেই স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করা সুন্নাত। (মুসলিমঃ৫৭৯)
২/স্ত্রীর সাথে চুল আঁচড়ে নেয়া সুন্নাত।
আয়েশা রাঃ রাসূল সাঃ এর চুল আঁচড়ে দিতেন (বুখারীঃ ২৯৫, মুসলিমঃ৫৭১)
৩/স্ত্রীর সাথে একই সাথে গোসল করা সুন্নাত। আয়েশা রাঃ এর সাথে এবং কখনো মাইমুনা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ পবিত্রতার গোসল করতেন (মুসলিমঃ৬২০, নাসাঈঃ ৩৮০)
৪/স্ত্রীর ব্যাবহার করা মেসওয়াক দিয়ে মেসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূল সাঃ যখন মৃত্যু সজ্জায়, তখন রাসূল সাঃ আয়েশা রাঃ এর কোলে শুয়ে ছিলেন এবং রাসূল সাঃ বার বার মেসওয়াকের দিকে তাকাচ্ছিলেন, কিন্তু রাসূল সাঃ এতোটাই অসুস্থ ছিলেন যে মেসওয়াক চিবোতে পারবেন না, তাই আয়েশা রাঃ মেসওয়াক চিবিয়ে দেন এবং রাসূল সাঃ ঐ মেসওয়াক দিয়ে মেসওয়াক করেন। হাদীসে এভাবে লালা একত্রিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে (বুখারীঃ ৫২২৬)
৫/ স্ত্রীর প্রশংসা করা সুন্নাত। রাসূল সাঃ আয়েশা রাঃ সবার সেরা, এবং খাদিজা আঃ এর ভালোবাসার প্রশংসা করতেন। (বুখারীঃ৫২২৯, ৩৪১১)
৬/স্ত্রীর সাথে খেলায় প্রতিযোগিতা করা সুন্নাত। রাসূল সাঃ এবং আয়েশা রাঃ রাত্রীতে সবাই ঘুমোলে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। (ইবনে মাজাহঃ১৯৭৯,আবু দাঊদঃ২৫৭৮)
৭/ স্ত্রীর মুখের খাবার খাওয়া সুন্নাত। আয়েশা রাঃ হাড় যুক্ত গোশত খাওয়ার পর রাসূল সাঃ আয়েশা রাঃ এর খাওয়া হাড় চুষে খেতেন।(মুসলিমঃ৫৭৯)
৮/ স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা সফরে যাওয়া সুন্নাত। স্ত্রীদের সফরে নিয়ে যেতে রাসূল সাঃ লটারী করতেন, যার নাম আসতো তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন। (বুখারীঃ২৫৯৩)
৯/শাওয়াল মাসে বিবাহ করা সুন্নাত। (তিরমিযিঃ১০৯৩)
১০/স্ত্রীকে সুন্দর নামে ডাকা সুন্নাত। (রাসূল সাঃ আয়েশা রাঃ কে হূমায়রা বলে ডাকতেন)
১১/স্ত্রী কে কখনো মারধর না করা সুন্নাত। রাসূল সাঃ কখনো কারো উপর প্রতিশোধ নিতেন না, এবং স্ত্রীদের ও মার ধর করতেন না। (বুখারীঃ৫২০৪, বুখারীঃ ৬১২৬)
১২/স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কোরআন তেলায়ত করা সুন্নাত। (বুখারীঃ২৯৭)
১৩/স্ত্রীর কাজকর্মে সহযোগিতা করা সুন্নাত। (বুখারীঃ ৬৭৬)
১৪/হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সাধারণ মেলামেশা করা সুন্নাত। (বুখারীঃ৩০০)
১৫/ স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়া সুন্নাত। এবং রাঃ বলেন স্ত্রীকে খাবার খাইয়ে দিলে তা সদকা হিসেবে কবুল হয়, এবং তার প্রতিদান রয়েছে। (আবু দাঊদঃ২৮৬৪)
১৬/স্ত্রীর রাগ অভিমান এবং মন বোঝার চেষ্টা করা সুন্নাত। রাসূল সাঃ বলেন আয়েশা তুমি আমার উপর রেগে থাকলে আমি বুঝতে পারি, আয়েশা রাঃ বলেন হে আল্লাহর রাসূল কিভাবে বোঝেন আপনি? রাসূল সাঃ বলেন তুমি যখন আমার উপর রেগে থাকো তখন বলো "হে ঈবরাহিম আঃ এর প্রভু" আল্লাহ কে এভাবে ডাকো, আর যখন খোশ মেজাজে থাকো তখন বলো, ("হে মুহাম্মদ সাঃ এর প্রভু" আল্লাহ কে এভাবে ডাকো।
(বুখারীঃ৫২২৮)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,
ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻷَﺻْﺤَﺎﺏِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺧَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﻭَﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﺠِﻴﺮَﺍﻥِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺧَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻟِﺠَﺎﺭِﻩِ
‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।’
(তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৯৪৪)
সুবহানআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা সকলকে রাসূল সাঃ এর সুন্নাত গুলো পালন করার তাওফিক দান করুন। তাওফিক দাতা আল্লাহ।
(তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৯৪৪)
মন্তব্যসমূহ